“এইচএমপিভি ভাইরাস” বর্তমান সময়ের নতুন ও অতিপরিচিত একটি নাম। “এইচএমপিভি ভাইরাস” এর কারনে আতঙ্কিত না হয়ে বরং আপনাকে এইচএমপিভি ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে এইচএমপিভি ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানাবো।
২০২১ সালের করোনা মহামারীর পরে এবার ২০২৫ সালের জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায় চীন থেকে এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ও সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি ভাইরাসের আক্রাত ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে চলেছে ধীরে ধীরে।
এইচএমপিভি ভাইরাস কী?
এইচএমপিভি এর পূর্ণ নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস। ভাইরাসটি নেগেটিভ-সেন্স, একক-সূত্রযুক্ত আরএনএ ভাইরাস, যা নিউমোভিরিডি পরিবারের মেটানিউমোভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত । এই পরিবারের মধ্যে রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাসও বিদ্যমান। এইচএমপিভির দুটি প্রধান শ্রেণী, এ এবং বি, মানুষের মধ্যে সক্রিয়ভাবে সংক্রমণ ঘটায়।
মানব মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের ক্ষেএে সক্রামনের হার বৃদ্ধি করে। ভাইরাসটি বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আক্রান্ত করে।
এইচএমপিভি ভাইরাস কি নতুন ভাইরাস?
এইচএমপিভি ভাইরাসটি নতুন ভাইরাস নয় বরং ২০০১ সালে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয় নেদারল্যান্ডে। ভাইরাসটি শীতকালীন সময়ে সক্রামণ ঘটায় ফলে প্রতি বছর শীতকালে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যায় তবে এবছর তুলনামূলকভাবে সংক্রমণের হার তুলনামূলক ভাবে বেশি যার ফলে শিশু,বৃদ্ধ,শারীরিকভাবে দূর্বল,রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এইচএমপিভি সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গ
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে, ভাইরাসটি সাধারণ সর্দির মতো ঊর্ধ্ব ও নিম্ন শ্বাসনালীতে সংক্রমনে সৃষ্টি করে যা মানবদেহে মৃদু অসুস্থতা থেকে গুরুতর পর্যায়ে পরিনিত হতে পারে। এক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ও শ্বাসনালির বিভিন্ন রোগ মানবদেহে সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ সাধারণত ৭ দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। এইচএমপিভি ভাইরাসে সংক্রামিত হলে যে সকল উপসর্গ দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর
- মাথা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- সর্দি কাশি
- নাক বন্ধ
- কখনো কখনো ত্বকে দেখা দিতে পারে।
- নাক দিয়ে পানি পড়া।
এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত কিভাবে হয়
এইচএমপিভি সাধারণত আর সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসকষ্ট জনিত ভাইরাসের মতো ভাইরাস। তবে এইচএমপিভি যেভাবে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় তা নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে:
- কাশি, হ্যাঁচি দেওয়ার ফলে মানবদেহে থেকে যে স্রাব বা শ্লেষ্মা বের হয় তার মাধ্যমে একজন রোগী থেকে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারেন।
- ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ যেমন হাত মেলানো স্পর্শ অথবা অন্যদের সাথে পানীয় বা খাবারের পাত্র শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন।
- ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা মোবাইল, পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিরা আক্রান্ত হতে পারেন।
এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে সুরক্ষার উপায়
এইচএমপিভি ভাইরাসের মাধ্যমে মানুষ যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে তেমনি ভাইরাসটি খুব সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে। নিম্নে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে, যারা অত্যাধিক কায়িক শ্রম করে থাকেন তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
- মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- ইতিমধ্যেই যারা জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন তাদের সাথে কিছুদিনের জন্য শারীরিকভাবে যোগাযোগ এগিয়ে চলতে হবে।
- অসুস্থ হলে বাড়িতে আলাদা কক্ষে অবস্থান করতে হবে।
- বাইরে থেকে এসে অবশ্যই স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে ও অন্তত 20 সেকেন্ড ধরে সাবানও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
- হাত দিয়ে নাক মুখ স্পর্শ না করা।
কারা এইচএমপিভিতে বেশি আক্রান্ত হন
বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তারা এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে একজন ব্যক্তি একাধিকবার এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে প্রথমবার ভাইরাসটিতে সংক্রমণের তীব্রতা বেশি থাকে। এছাড়া যাদের শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনি, যকৃতের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে যারা ভুগছেন তাদের রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
এইচএমপিভি কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে
একদমই না,ভাইরাসটির কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, ভাইরাসটি সর্বপ্রথম ২০০১ সালের শনাক্ত করা হয় এরপর ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ এর ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় এবং পরবর্তী বছরে ২০১৭ সালে ভাইরাসটি বাংলাদেশ পুনরায় শনাক্ত হয়েছিল। শারীরিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তিদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে শিশু, বয়স্ক,বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ভাইরাসটির সংক্রমণ তীব্র হতে পারে।
এইচএমপিভি নিয়ে শেষ কথা
এইচএমপিভি ভাইরাসটি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে নিজের ও পরিবারের খেয়াল রাখুন ও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা অবলম্বন করুন। কেবলমাত্র সচেতনতাই পারে উক্ত ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে। নিজে সচেতন হন ও অন্যকে সচেতন করুন অযথা আতঙ্কিত না হয়ে।
আরও জানুনঃ মোবাইলের ক্যামেরা ট্রিকস: সেরা ফটোগ্রাফির জন্য উপকারী টিপস